সিমেন্ট কি>>>>>>>>>
সিমেন্ট হল সেই সকল গুড়া জাতীয় পদার্থের সাধারণ নাম, যাদেরকে পানি বা অন্য কোন তরলের সাথে মিশ্রিত করলে কাদার মত নমনীয় পদার্থ পাওয়া যায় এবং তা কিছু সময়ের মধ্যে জমে গিয়ে বিভিন্ন দৃঢ়তার শক্ত পদার্থ গঠন করে। সিমেন্ট বাড়ী-ঘর, রাস্তা, সেতু ইত্যাদি যাবতীয় নির্মান কাজের প্রধান উপাদান।
সিমেন্ট শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে “রোমানস্” থেকে, তৎকালিন রোমানরা পোড়া চুন ও গুঁড়ো শিলা দিয়ে দেয়াল তৈরি করত যা প্রায় আধুনিক কংক্রিট মত এবং এটিকে তার বলত caementicium। রোমানস্-রা,আগ ্নেয় ছাই ও পোড়া চুন পানির সাথে মিশিয়ে তা দিয়ে ইট, পাথর, স্লেট জোড়া দিয়ে দেয়াল তৈরি করত যাকে ascementum, cimentum, cäment এবং সিমেন্ট হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
সিমেন্ট আমাদের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান, যা প্রকৌশলীদের কাছে ফাইন এগ্রিগেট নামে পরিচিত। বেশীরভাগ কাজে আমরা পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট ব্যবহার করলেও বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে সিমেন্ট আরো অনেক প্রকারের হয়ে থাকে, এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা যায় মোটামুটি সিমেন্ট ১৪ প্রকারের হয়ে থাকে। সিমেন্ট শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে “রোমানস্” থেকে, তৎকালিন রোমানরা পোড়া চুন ও গুঁড়ো শিলা দিয়ে দেয়াল তৈরি করত যা প্রায় আধুনিক কংক্রিট মত এবং এটিকে তার বলত caementicium। রোমানস্-রা,আগ
০১. অরডিনারী পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (OPC)
০২. পোর্টল্যান্ড পোজ্জলানা সিমেন্ট (PPC)
০৩. র্যাপিড হার্ডেনিং সিমেন্ট (দ্রুত জমাটবদ্ধ)
০৪. লো হিট সিমেন্ট (কম তাপ উৎপাদনকারী)
০৫. কুইক সেটিং সিমেন্ট
০৬. সালফেট রেজিস্টিং সিমেন্ট
০৭. হাই এলুমিনা সিমেন্ট
০৮. হোয়াইট সিমেন্ট (সাদা সিমেন্ট)
০৯. কালার সিমেন্ট (রঙিন সিমেন্ট)
১০. এয়ার এন্ট্রানিং সিমেন্ট
১১. এক্সপেন্সিভ সিমেন্ট
১২. হাইড্রোগ্রাফিক সিমেন্ট
১৩. ব্লাস্ট ফারনেন্স স্লাগ সিমেন্ট
১৪. অয়েল ওয়েল সিমেন্ট
আসুন তবে জেনে নেই ১৪ প্রকার সিমেন্ট ও তাদের ব্যহারের স্থান
০১. অরডিনারী পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (OPC)
সিমেন্ট এর বলতে আমরা যা সচরাচর ব্যবহার করি সেটাই অরডিনারী পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট বা ওপিসি নামে পরিচিত। সকল ধরনের সাধারন নির্মাণ কাজে এই সিমেন্ট ব্যবহার হয়, সারা দুনিয়াতে যা পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট নামে পরিচিত। এই সিমেন্ট সহজলভ্য, দামে সাশ্রয়ী এবং ব্যবহারবিধি খুবই সহজ বলে এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশী।
০২. পোর্টল্যান্ড পোজ্জলানা সিমেন্ট (PPC)
পোজ্জলানা বলতে বুঝায় আগ্নেয়গিরি থেকে প্রাপ্ত ক্লিংকার এর মিহি অ্যাশ, সাধারন পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট এর সাথে এর ক্লিঙ্কার অ্যাশ মিশ্রিত করে তৈরী করা হয় পোর্টল্যান্ড পোজ্জলানা সিমেন্ট। যা পানির সাথে সম্পর্কিত স্ট্রাকচারের কাজে বেশী ব্যবহৃত হয় যেমন ড্যাম, কাল্ভারট, ব্রীজ ইত্যাদি
০৩. র্যাপিড হার্ডেনিং সিমেন্ট (দ্রুত জমাটবদ্ধ)
র্যাপিড হার্ডেনিং সিমেন্ট অনেকটা সাধারন পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট এর মতই ব্যবহৃত, এই সিমেন্টে চুন এবং C3S এর পরিমান বেশি পরিমানে থাকে বিধায় দ্রুত জমাট হতে সাহায্য করে, যে কাঠামতে সাটারিং দ্রুত খুলে ফেলার প্রয়োজন হয় সেখানে এই সিমেন্ট দিয়ে কংক্রিটিং করা হয়। এই সিমেন্ট দিয়ে ৩দিনে সেই শক্তি পাওয়া যায় যা ৭ দিনে সাধারন পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট দিয়ে পাওয়া যায়।
০৪. লো হিট সিমেন্ট (কম তাপ উৎপাদনকারী)
যেখানে সাধারন সিমেন্ট ব্যবহারের কারনে কাঠামোতে তাপ উৎপন্ন হয়ে সুক্ষ ফাটল তৈরীর আশংকা থাকে সেখানে লো হিট সিমেন্ট ব্যবহার হয় যেমন ড্যাম এর কাজে সূক্ষ ফাটল অনেক ক্ষতির কারন হতে পারে। সাধারন পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের তুলনায় লো-হিট সিমেন্টে ট্রাই-ক্যালসিয়াম আলুমিনার পরিমান কমিয়ে দেয়া হয় যাতে তাপের পরিমান কমে আসে।
০৫. কুইক সেটিং সিমেন্ট
র্যাপিড হার্ডেনিং সিমেন্ট থেকেও যে স্থানে আরো দ্রুত মসলা জমাট বাধার দরকার সেখানে এই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়, যেমন নদীতে চলমান পানির প্রবাহ কাঠামতে, এক ঘন্টার মাঝেই এই সিমেন্ট এর প্রাথমিক সেটিং শুরু হয়ে যায় এবং এক দিনেই জমাট হয়ে যায়, র্যাপিড হার্ডেনিং সিমেন্ট এর প্রস্তুত প্রনালী ও এর প্রস্তুত প্রনালী অনেকটা একই।
০৬. সালফেট রেজিস্টিং সিমেন্ট
যে স্থানে মাটি বা পানিতে সালফেটের উপস্থিতি অত্যাধিক সেখানে কাঠামোকে সালফেট জনিত ক্ষয় থেকে রক্ষা করতে সালফেট রেজিস্টিং সিমেন্ট ব্যবহার হয়। এই সিমেন্ট তৈরী করার সময় সিমেন্টে সালফেটের পরিমান কমিয়ে দেয়া হয় যাতে কাঠামোর বাইরের সালফেটে কারনে কাঠামতে ক্ষতি না হয়।
০৭. হাই এলুমিনা সিমেন্ট
হাই এলুমিনা সিমেন্টও এক প্রকারের দ্রুত জমাটবদ্ধ সিমেন্ট যা তৈরী হয় বক্সাইট, চুন এবং ক্লিংকারের মিশ্রনে, এই সিমেন্ট তিন ঘন্টায় প্রাথমিক এবং পাঁচ ঘণ্টায় ফাইনাল সেটিং হয়ে যায়। এই সিমেন্টে কাজে ফ্লো ভালো পাওয়া যায় এবং ব্যবহৃত কাঠামোতে অনেক শক্তি পাওয়া যায়। খারাপ আবহাওয়া যেমন অধিক তাপমাত্রা, অধিক তুষারপাত এলাকায় এই সিমেন্টের ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।
০৮. হোয়াইট সিমেন্ট (সাদা সিমেন্ট)
সাদা সিমেন্টও এক প্রকার সাধারন পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট যা কিনা আয়রন অক্সাইড থেকে মুক্ত এবং সাদা রঙয়ে প্রস্তুত করা হয়, এই সিমেন্ট কাঠামোর সৌন্দর্য কাজে ব্যবহৃত হয় যেমন টাইলস লাগানো বা পয়েন্টিং, ফেয়ার ফেস দেয়াল, ফ্লোরে ইত্যাদি। অধিক ভারী এরিয়াতে এই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয় না, প্রধানত সৌন্দর্য বর্ধনের কাজে এর ব্যবহার ব্যপক।
০৯. কালার সিমেন্ট (রঙিন সিমেন্ট)
সাদা সিমেন্টের সাথে নিদিষ্ট পরিমানে কালার মিক্স করে এই সিমেন্ট তৈরী করা হয়ে থাকে, সাধারণত বিশেষ জায়গাতে সৌন্দর্য কাজে ব্যবহারের জন্যে এই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়।
১০. এয়ার এন্ট্রানিং সিমেন্ট
এয়ার এন্ট্রিনিং সিমেন্ট বলতে বুঝায় যে সিমেন্ট ব্যবহারে সিমেন্টে সূক্ষ ছিদ্রতা কমে আসে, সিমেন্টের সব উপাদানের সাথে রেজিন বা গ্লু জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়, সিমেন্টে হানিকম্ব কমিয়ে এনে সিমেন্ট কে তাপমাত্রা প্রতিরোধক করে তৈরী করা হয়।
১১. এক্সপান্সিভ সিমেন্ট
এক্সপান্সিভ বা বেড়ে যাওয়া সিমেন্ট বলতে বুঝায় যে সিমেন্ট তার মুল আয়তন থেকে আয়তনে আরো বৃদ্ধি পায়, ফাটলে ভরাটে, এংকর বোল্ট এর ফাকা কমাতে এই সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়।
১২. হাইড্রোগ্রাফিক সিমেন্ট
সাধারন সিমেন্টের সাথে পানি প্রতিরোধক ক্যামিকেল মিশ্রিত করে হাইড্রোগ্রাফিক সিমেন্ট তৈরী করা হয়। যেখানে পানির সংস্পর্শ কাঠামোকে দুর্বল করার আশংকা থাকে সেখানে এই সিমেন্ট ব্যবহার করা হয় যেমন ব্রিজ কাল্ভারট, ড্যাম, পোর্ট।
১৩. ব্লাস্ট ফারনেন্স স্লাগ সিমেন্ট
সাধারন পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতই এই সিমেন্ট প্রস্তুত করা হলেও এই সিমেন্টে ক্লিংকারের সাথে ৬০% মত স্লাগ ব্যবহার হয়। যেখানে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে সিমেন্টের খরচ কমানোর প্রয়োজন পরে সেখানে এই সিমেন্ট ব্যবহার হয়।
১৪. অয়েল ওয়েল সিমেন্ট
এই সিমেন্ট তরলের মত পাইপ লাইনের দুই পাশে ফাকা ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হয়। সাধারন পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতই এই সিমেন্ট তৈরী করা হয়।