রমজান মাসে ইফতারের সময় জনপ্রিয় খাবার হলো ছোলা। ছোলা-মুড়ি সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। আমাদের দেশে ছোলার ডাল নানাভাবে খাওয়া হয়। কাঁচা, রান্না করে মুড়ির সঙ্গে বা ডাল হিসেবে। বাজারে ভেজেও বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি পুষ্টি হলো কাঁচা ছোলাতে। রান্না ছোলাতে তেল দেওয়া থাকে বলে এতে ফ্যাটের পরিমাণ রয়েছে। অনেকে কাঁচা ছোলা দেহের বডি গঠনে খেয়ে থাকেন। কাঁচা ছোলার গুণ সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। ছোলায় বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। কাঁচা, সেদ্ধ বা তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়। আমিষ মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায়। আর অ্যান্টিবায়োটিক যেকোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় যা আছে
উচ্চমাত্রার প্রোটিন,আমিষ প্রায় ১৮ গ্রাম,
কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৬৫ গ্রাম,
ফ্যাট মাত্র ৫ গ্রাম,
২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,
ভিটামিন ‘এ’ প্রায় ১৯২ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন বি-১ ও বি-২ আছে।
আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক
এছাড়া জেনে নিতে পারেন থানকুনি পাতার যতো গুনাগুন (মেগা পোস্ট)
জেনে নিতে পারেন আদার হাজারো গুনাগুন (মেগা পোস্ট)
জেনে নিন ছোলার উপকারী স্বাস্থ্যগুণের কথা:
- কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে, কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে একই সঙ্গে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক গঠন হয়।– ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকায় শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়।
– ছোলাতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরনের খাদ্য আঁশ আছে। এই খাদ্য আঁশ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
- কাঁচা ছোলা খেলে পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়, আপনি পাবেন বেশী হাটার শক্তি।
– ছোলা খাদ্যনালীতে ক্ষতিকর জীবাণু দূর করে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমায়।
– কাঁচা ছোলা চিবিয়ে খেলে এর রস দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত।
- পানিতে ভেজানো ছোলার খোসা ফেলে কাঁচা আদা কুচি দিয়ে খেলে তা শরীরের জন্য জোগাবে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি।
– হঠাৎ যদি দেহের মধ্যে অস্থির অনুভব হয়, তাহলে ছোলা খেয়ে নিতে পারেন। দেখবেন উপকার পাবেন।
– ছোলার শর্করা গ্লুকোজ হয়ে দ্রুত রক্তে যায় না। তাই ডায়াবেটিকস রোগীর জন্য ছোলা খুবই উপকারী খাবার।
-ছোলায় অবস্থিত আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে আর্টারির কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
– ছোলার ফ্যাটের বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড। এই ফ্যাট শরীরের জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়, বরং রক্তের চর্বি কমায়।
- ছোলায় আছে বেশি পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড যা গ্রহণের মাধ্যমে নারীরা কোলন ক্যান্সার এবং রেক্টাল ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে পারে।
-ছোলায় বেশ ভাল পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড থাকে সেহেতু ছোলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
- ছোলা বয়সসন্ধি পরবর্তীকালে মেয়েদের হার্ট ভাল রাখতেও সাহায্য করে।
– কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হয়।
-ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল।
– ছোলায় আছে আমিষ যা মানুষকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান বানায়
– ছোলায় আরো আছে অ্যান্টিবায়োটিক যে কোনো অসুখের জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
– ছোলা খাওয়ার পর বেশ অল্প সময়েই হজম হয়।
– কাঁচা ছোলা খাওয়ায় ত্বকে আনে মসৃণতা, ত্বকের লাবণ্য ফিরিরে আনে এবং গায়ের কালচে ভাবটিও কেটে যাবে।
– ছোলা বাঁটা মুখে ব্যবহার করলে ত্বকের সৌন্দর্য ও টান টান ভাব ফিরে আসে।
– মুখে ব্রণ বা মেছতা হরে ছোলা ভিজিয়ে বেটে মুখে লাগান। এতে ব্রণ দূর হয় এবং মেছতার দাগ মুছে যায়।
– ছোলায় আছে সালফার যা মাথা গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কমায়।
– ছোলায় আছে ভিটামিন ‘বি’ও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ভিটামিন ‘বি’ কমায় মেরুদণ্ডের ব্যথা, স্নায়ুর দুর্বলতা।
– ছোলার গায়ে যে আঁশ থাকে, তা পাকস্থলীকে (যেখানে খাবার জমা থাকে) করে গ্যাসমুক্ত, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
–পরিষ্কার পানিতে ছোলা সেদ্ধ করে সেই পানি খেলে বদহজম থাকবে না
– কাঁচা ছোলা চিবিয়ে খেলে এর রস দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত।
– ছোলায় যে খনিজ লবণগুলো রয়েছে তা দাঁত, চুল, হাড়কে করে মজবুত।
– ছোলার প্রোটিন দেহকে করে দৃঢ়, শক্তিশালী, হাড়কে করে মজবুত, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এর ভূমিকা অপরিহার্য।
– ছোলায় বেশ ভাল পরিমাণ ফলিক এসিড থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
– ছোলায় থাকা প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি দীর্ঘক্ষণ ধরে শরীরে শক্তির যোগান দেয়।
_ ছোলা পুষ্টিকর একটি ডাল। এটি মলিবেডনাম এবং ম্যাঙ্গানিজের চমৎকার উৎস।
– ছোলায় আছে ফলিক অ্যাসিড যা রক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপও কমিয়ে দেয়।
– ছোলা শরীরের অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়।
– কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার সঙ্গে খেলে শরীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চাহিদা পূরণ হয়।
– খাবারে ছোলা যুক্ত করলে টোটাল কোলেস্টেরল এবং খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়।
–শ্বাসনালীতে জমে থাকা পুরনো কাশি বা কফ ভালো হওয়ার জন্য কাজ করে শুকনা ছোলা ভাজা।
– যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
– ছোলা বা বুটের শাকও শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এই ছোলায় ও ছোলার শাকে।
– ছোলা অনেক উপকার। যাদের রক্তে চর্বি বেড়ে গেছে তারা নিয়মিত ছোলা খাওয়ার অভ্যাস করুন, দেখবেন উপকার পাবেন।
– ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকায় শরীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূর হয়।
– ছোলা কৃমিনাশক হিসেবেও কাজ করে। সারা রাত ছোলা ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে কৃমি মারা যায়।
– কাচা ছোলায় রয়েছে জ্বর ভালো করার ক্ষমতা।
– সাবানের মতো ছোলা শরীরের চামড়া পরিষ্কার করে। ছোলা বা মটর দানার বেসন পানিতে ভিজিয়ে গোসলের আগে শরীরে মাখলে শরীর থেকে ময়লা পরিস্কার হয়ে যায়।
– ছোলার খোসা সেদ্ধ করে সেই সেদ্ধ পানি বার বার খেলে পিত্ত রোগ ভালো হয়।
কাঁচা ছোলার কিভাবে খাবেনঃ
- রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে পেয়াজের সাথে কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন।
- যারা প্রথম অবস্থায় খাওয়া শুরু করতে চান তারা হাল্কা ৫মিনিট সেদ্ধ করে খেতে পারেন।
- পুরপুরি সেদ্ধ করে লবন দিয়ে খেতে পারেন।
- এছাড়া বাসা-বাড়িতে ডালের মত রান্না করেও খেতে পারেন।
কাঁচা ছোলার অপকারিতাঃ
– ছোলা ভেজে না খাওয়া ভাল। - যাদের বমির উদ্রেক হয় তাদের না খাওয়াই ভালো।– মোটা ব্যক্তি বা উচ্চরক্তচাপ আছে যাঁদের তাঁরা কাঁচা ছোলা খান।
– মোটা ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত তেল, মসলা দেওয়া ছোলা হলো ঝুঁকিপূর্ণ।
– হজম করতে না পারলে কাঁচা ছোলা খাবেন না।
– কিডনির সমস্যা যাঁদের রয়েছে (ডায়ালাইসিস চলছে, রক্তে ক্রিয়েটিনিন, ইউরিক এসিড বা ইউরিয়ার পরিমাণ বেশি) তাঁরা যেকোনো রকম ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।